অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ‘বিবিসি’র তৈরি তথ্যচিত্রের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনকারী অ্যাডভোকেট মনোহর লাল শর্মা শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছেন। এ নিয়ে আগামী (সোমবার) অর্থাৎ ৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
সর্বোচ্চ আদালতে করা আবেদনে ‘বিবিসি’র তথ্যচিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আইনজীবী মনোহর লাল শর্মার দায়ের করা আবেদনে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারী, দুর্ভাগ্যজনক এবং অসাংবিধানিক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেছেন এমএল শর্মা, দ্বিতীয় আবেদনটি সাংবাদিক এন রাম এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, এবং তৃতীয় আবেদনটি দায়ের করেছেন তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র এমপি। আবেদনে বলা হয়েছে, সরকার তার জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে টুইট ও ক্লিপ ব্লক করছে। সাংবাদিক এন রাম এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের টুইট মুছে ফেলা হয়েছে।
আইনজীবী সিইউ সিং আজমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাসপেন্ড করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বিবিসি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের জন্য ছাত্রদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। শুধু তাদের ক্লাস থেকে সাসপেন্ড করা হয়নি, ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
আসলে, বিবিসি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’তথ্যচিত্র তৈরি করেছে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার উপর। কেন্দ্রীয় সরকার বিবিসির তথ্যচিত্রটিকে অপপ্রচার বলে নিষিদ্ধ করেছে। ওই তথ্যচিত্র নিয়ে ভারতে কার্যত তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যচিত্রের স্ক্রিনিং নিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাম এবং এবিভিপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তথ্যচিত্রটির স্ক্রিনিং নিয়ে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, কোলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক হৈচৈ হয়েছে। একই সময়ে, কেরালায় বাম সংগঠন এবং কংগ্রেস বিভিন্ন জায়গায় বিবিসির বিতর্কিত ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শন করছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ‘বিবিসি’র তথ্যচিত্রের লিঙ্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তুলে নেওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, আইটি বিধি ২০২১-এর জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে ৫০টির মতো টুইট তুলে নেওয়ার জন্যও কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
দু’দশক আগে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে গোধরাকাণ্ড এবং তার পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথা তুলে ধরা হয়েছে এক ঘণ্টার ওই তথ্যচিত্রে। ‘ইন্ডিয়া-দি মোদী কোয়েশ্চেন’ তথ্যচিত্রটি নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় সরকার। একে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে তথ্যচিত্রটি তৈরি বলে দাবি করা হয়েছে। বিবিসি অবশ্য যথেষ্ট গবেষণা করে তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে।
Leave a Reply